হোমিওপ্যাথি কি?
ইংরেজী
Homoeopathy শব্দটি গ্রীক শব্দ Homoeo বা Homoeoios এবং Pathy বা Pathos হতে
উৎপন্ন হয়েছে। আভিধানিক অর্থে হোমিওপ্যাথি অর্থ হলো ‘সদৃশ রোগ’। ডাঃ
এলেনের মতে ‘হোমিওপ্যাথি সদৃশ বিধান ভিত্তিক একটি নিয়ম ভিত্তিক চিকিৎসাশাস্ত্র’।
হোমিওপ্যাথি কি বিজ্ঞানভিত্তিক ?
হোমিওপ্যাথির তত্ত্ব ও প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বৈজ্ঞানিক
পদ্ধতি অনুসরণ করে রচিত হয়েছে
। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান,
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা-ব্যবস্থা আপন মহিমায় প্রজ্বলিত। বর্তমানে বিশ্বে সাড়া জাগানো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. জর্জ ভিথোলকাসের মতে, রোগের প্রথম অবস্থায় (৭০-৮০%) রোগ হোমিওপ্যাথিতে নিরাময় করা সম্ভব। ফ্রান্সের প্রফেসর জ্যাকুই বেনভেনেস্তের নেতৃত্বে তিনটি উন্নত দেশের ১৪ জন বিজ্ঞানীর একটি প্রতিনিধি দল দীর্ঘ ৩ বছর গবেষণা চালিয়ে রিপোর্ট দেন, ‘হোমিওপ্যাথি ওষুধের কার্যকারিতা নিঃসন্দেহ এবং শক্তিকরণ পদ্ধতি বিজ্ঞানভিত্তিক’। হোমিওপ্যাথিকে অগণিত দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ,বিজ্ঞানী, ,শিক্ষাবিদ,
বুদ্ধিজীবী ও গবেষকগণ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
হোমিওপ্যাথির সাথে ডাঃ হ্যানিম্যানের সম্পর্ক কি?
হোমিওপ্যাথি জার্মান চিকিৎসক নাম ক্রিস্টিয়ান ফ্রেড্রিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান
(Christian Friedrich Samuel Hahnemann) উদ্ভাবিত
(১৭৯৬)
এক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্নিহিত মূলনীতি হচ্ছে-
কোনো একজন সুস্থ ব্যক্তির শরিরে যে ওষুধ প্রয়োগ করলে তার মধ্যে যে লক্ষণ দেখা দেয়,
ঐ একই ওষুধ সেই লক্ষনের ন্যায় অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে প্রয়োগ করলে তা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অসুখের লক্ষণ নিরাময়ের কাজ করে। হ্যানিম্যানের প্রস্তাবিত এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল জার্মানির মিশেনে স্যাকসনি নগরে হ্যানিম্যানের জন্ম। যার অবস্থান ড্রিসডেন শহরের বিশ মাইল উত্তর-পশ্চিমে
(পোল্যান্ড এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার বর্ডারের কাছে)। তাঁর পিতার নাম ছিল ক্রিস্টিয়ান গটফ্রাইড হ্যানিম্যান এবং মাতার নাম ছিল জোহান্না ক্রিস্টিয়ানা। তিনি ৮৮ বছর বয়সে ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।
হ্যানিম্যান ২২ বছর বয়সে ইংরেজী,
ফরাসী,
গ্রিক,
ল্যাটিন,
সপ্যানিশ এবং আরবী ভাষায সহ ১১টি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
সেকালে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরব দেশীয় মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের লেখা পুস্তকসমূহ পড়ানো হতো। চিকিৎসক হওয়ার জন্য সে সময়ে আরবী ভাষা শিখতে হতো। আরব দেশীয় মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মধ্যে ইবনে সীনা,
ফারাবী,
আল কিন্দি ছিলেন অন্যতম।
তিনি ক্রমান্বয়ে প্রচলিত চিকিৎসা-পদ্ধতি পরিত্যাগ করে রোগার্ত মানুষকে স্বল্প সময়ে বিনা কষ্টে স্থায়ীভাবে রোগ নির্মূল তথা প্রাকৃতিক আরোগ্য সাধন পদ্ধতি অনুসন্ধানে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
দীর্গ
ছয় বৎসর গবেষণার পর অবশেষে ১৭৯৬ সালে হ্যানিম্যান উদাত্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন-
‘প্রকৃতির সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণ
করে নির্মল আরোগ্য বিধান সম্ভব নয়। আদর্শ আরোগ্য বিধানের প্রকৃতি নির্দিষ্ট একটি মাত্র
পথই আছে তা হলো ‘Similia
Similibus Curantur’ অর্থাৎ যে ভেষজ সুস্থ দেহে যে ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম সেই ধরনের রোগ সেই ভেষজ দ্বারাই আরোগ্য লাভ সম্ভব।’
No comments:
Post a Comment