ওমরা ছোট হজ হিসেবে পরিচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। - EDesk Job eTutorials ওমরা ছোট হজ হিসেবে পরিচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। - EDesk Job eTutorials

সর্বশেষ

2024-11-21

ওমরা ছোট হজ হিসেবে পরিচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

ওমরা পালন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা একান্ত ভক্তি নিয়মমাফিক সম্পন্ন করতে হয়। 

omrah hajj


ওমরা পালনের ধাপগুলো সংক্ষেপে মনে রাখুনঃ-

ইহরাম: মিকাতে বাঁধুন, তালবিয়া পড়ুন।

তাওয়াফ: কাবাকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করুন।

সাঈ: সাফা-মারওয়ার মধ্যে ৭ বার হাঁটুন।

চুল কাটা: মুন্ডন বা চুল ছোট করুন।

এই ধাপগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ওমরা সম্পন্ন হয়।


এখানে প্রতিটি ধাপের বর্ণনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো:

১. নিয়ত করা (ইহরাম বাঁধা)

ইহরাম:

ওমরা শুরু করার জন্য নির্ধারিত স্থান (মিকাত) থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়।

ইহরামের জন্য সাদা কাপড় পরিধান করা হয় (পুরুষদের জন্য দুটি সাদা বস্ত্র, নারীদের জন্য শালীন পোশাক)। অতঃপর রাকাআত নামাজ পড়ে ইহরামের নিয়ত করতে হয়।

নিয়ত:

اَللَّهُمَّ اِنِّي اُرِيْدُ العُمْرَةَ فَيَسِّرْهُ لِيْ وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّي


উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরার ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।’ 

তালবিয়া পাঠ:

ইহরাম বাঁধার পর বারবার এই দোয়া পড়তে হবে:

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ : ‘লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’

২. মক্কায় প্রবেশ ও তাওয়াফ করা

মক্কায় পৌঁছে কাবা শরিফের দিকে যান।

কাবা ঘর দেখে এই দোয়া পড়তে হবে:-


اَللَّهُمَّ أَنْتَ السّلَامُ وَ مِنْكَ السَّلَامُ حَيِّنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ اَللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ تَكْرِيْماً وَ مَهَاَبَةً وَ زِدْ مَنْ شَرّفَهُ وَ كَرّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ وَاعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفاً وَ تَعْظِيْماً وَ بِرُّا


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু হাইয়্যিনা রাব্বানা বিস্সালাম। আল্লাহুম্মা যিদ হাজাল বাইতা তাশরিফান ওয়া তাজিমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মুহাবাতান; ওয়া জিদ মান শার্রাফাহু ওয়া কার্রামাহু মিম্মান হাজ্জাহু ওয়াতামারাহু তাশরিফান ওয়া তাকরিমান ওয়া তাজিমান ওয়া বির্রা।

কাবার তাওয়াফ শুরু করুন (৭ বার কাবা ঘরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করা)।

প্রথম তিন চক্কর দ্রুত হাঁটুন (রামল)

শেষ চার চক্কর ধীরগতিতে হাঁটুন।

প্রতিটি চক্করের শুরুতে হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করা বা ইশারা করা সুন্নত।

তাওয়াফ করার সময় দোয়া পড়ুন, বিশেষ করে এই দোয়া:-


رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ


উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্ নার।

ইজতিবা ও রমল

ইজতিবা ও রমল তাওয়াফের সুন্নত আমল, যা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। এগুলো তাওয়াফের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশিত বিশেষ পদ্ধতি।

এগুলো পালনের নিয়ম হলো:-

ইজতিবা (চাদর পরার বিশেষ পদ্ধতি)

  • পুরুষরা তাদের ইহরামের চাদরের এক প্রান্ত ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধের ওপর ফেলে রাখবেন।
  • এতে বুক ও ডান কাঁধ খোলা থাকবে।
  • এটি একটি সুন্নত, যা বাহাদুরি ও আত্মবিশ্বাস প্রকাশের উদ্দেশ্যে করা হয়।

রমল (তাওয়াফের বিশেষ পদ্ধতি)

  • ফরজ তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নত।
  • রমল মানে দ্রুত এবং শক্তভাবে হাঁটা, শরীর ও কাঁধ সামান্য দোলানো।
  • বাকি চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করতে হয়।

৩. সাফা ও মারওয়া সাঈ করা

  • তাওয়াফ শেষ করে সাফা মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাঈ করতে হবে।
  • সাঈ হলো সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত ৭ বার দৌড়ানো বা হাঁটা। ঝমঝমের পানি পান করে ধীরে ধীরে সাফা পাহাড়ে করতে হবে।

সাঈ শুরুর আগে ঝমঝমের পানি পান করতে হবে। ধীরে ধীরে সাফা পাহাড়ে উঠে কাবার দিকে মুখ করে দোয়া করুন।

দোয়াটি বার পড়ে সাফা পাহাড় থেকে মারওয়ার দিকে চলা শুরু করতে হবেঃ-


لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – لَهُ المُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَ يُمِيْتُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيئ قَدِيْر
لَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ أنْجَزَ وَعْدَهُ – وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ


উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু হাযাামাল আহযাবা ওয়াহদাহু।

 

মারওয়া পাহাড় থেকে আবার সাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় দোয়া পড়তে হবেঃ-


اَللهُ اَكْبَر - اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُ - لَا اِلَهَ اِلَّا الله وَحْدَهُ صَدَقَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ هَزَمَ الأحْزَابَ وَحْدَهُ – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ
وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَفِرُوْنَ - رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ


উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু সাদাক্বা ওয়াদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলিসিনা লাহুদদ্বীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরুন। রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরাম। ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআয়িরিল্লাহি ফামান হাজ্জাল বাইতা আয়িতামারা ফালা ঝুনাহা আলাইহি আঁইয়্যাতত্বাওয়াফা বিহিমা ওয়া মাং তাত্বাওওয়াআ খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকেরুন আলিম।

 

সবুজ চিহ্নিত স্থান

সাফা পাহাড় থেকে সাঈ শুরু করার পর একটি সবুজ চিহ্নিত স্থান পড়ে। এ স্থানটি বিশেষভাবে সবুজ লাইট দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে।

পুরুষদের জন্য:

সবুজ চিহ্নিত স্থানে পৌঁছালে পুরুষরা দ্রুত দৌড়ে অতিক্রম করবে। এটি সুন্নত।

নারীদের জন্য:

নারীরা এ স্থানটি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে অতিক্রম করবে।

এই চিহ্নিত স্থানটি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সাঈর অংশ হিসেবে এটি পালন করা হয়।

সবুজ চিহ্নিত স্থানে দোয়া পড়তে হবেঃ-


رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ


উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতাল আআযযুল আকরাম।

সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক গতিতে হাটবে এবং এ তাসবিহ পড়বেঃ-


اَللهُ اَكْبَر - اَللهُ اَكْبَر- اَللهُ اَكْبَر- وَ لِلَّهِ الْحَمْدُ
اَللَّهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيْمَانَ وَ كَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ


উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদু। আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইনাল ইমানা ওয়া কাররিহ ইলাইনাল কুফরা ওয়াল ফুসুক্বা ওয়াল ইসয়ানা ওয়াঝআলনা মিন ইবাদিকাস সালিহিন।

৪. কেশ কাটানো বা মুন্ডন করা

  • সাঈ শেষ করার পর পুরুষরা মাথার চুল মুন্ডন করবেন বা ছোট করবেন।
  • নারীরা চুলের সামান্য অংশ কাটবেন।

ইহরাম মুক্ত হওয়া

কেশ কাটানো বা মুন্ডন করার পর ইহরাম শেষ হয়ে যায়, এবং আপনি ওমরা সম্পন্ন করেছেন।


অতিরিক্ত নির্দেশনা:

  • শুদ্ধ নিয়ত মনোযোগ: ইবাদতের সময় আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন।
  • সুন্নত পালন: প্রতিটি ধাপে রাসূল (সা.) এর সুন্নত অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।
  • মসজিদুল হারামে নামাজ: ওমরা চলাকালে বেশি বেশি নফল নামাজ, দোয়া ইবাদত করুন।

সঠিক নিয়মে ওমরা পালন করলে এটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং বিপুল সওয়াব অর্জিত হবে।


No comments:

Post a Comment